বাংলাদেশ মহিলা দল বনাম ভারত মহিলা দল – প্রথম ওডিআই

ভারত দলের বাংলাদেশ সফরের টি টোয়েন্টি সিরিজ সমাপ্ত হয়েছে সম্প্রতি। উক্ত সিরিজে ৩ ম্যাচের দুটিতে জয় পায় ভারতীয় মহিলা ক্রিকেট দল এবং সিরিজের শেষ ম্যাচে জয় পায় বাংলাদেশ মহিলা দল (ক্রিকেট দল)। তিন ম্যাচে টি টোয়েন্টি সিরিজ শেষে বর্তমানে শুরু হয়েছে বাংলাদেশ মহিলা দল বনাম ভারত মহিলা দলের মধ্যকার ওডিআই সিরিজ। আর এখানেই হয়েছে এক অবাক কান্ড, যা ক্রিকেট বিশ্ব আগে কখনো দেখেনি।

ওয়ানডে ক্রিকেটে প্রথমবারের মতো ভারতকে হারিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট নারী দল। আর এতেই শেরে বাংলা জাতীয় স্টুডিয়ামে এক রেকর্ড গড়ে বাংলাদেশ নারী দল। কিভাবে তারা সেদিন ৪০ রানের এক অসাধারণ জয় তুলে নিয়েছিল, তাদের স্ট্র্যাটেজি এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে থাকছে আজকের প্রতিবেদন।

বাংলাদেশ মহিলা দল বনাম ভারত মহিলা ওডিআই ম্যাচ পটভূমি

ভারত নারী দল এবং বাংলাদেশ নারী দল ইতিপূর্বে মুখোমুখি হয়েছে ৫ বার। কিন্তু ৫ ম্যাচের একটিও বাংলাদেশ মহিলা ক্রিকেট দল জয়লাভ করতে পারেনি। কিন্তু ১৬ই জুলাই রবিবার শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে ভারতকে ৪০ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে জাদু দেখানো বাংলাদেশ নারী দল। যদিও একটি ইনিংস শেষ হতেই সবাই ধরে নিয়েছিল আবারও বাংলাদেশ মহিলা দলের জন্য আজকের দিনটি হতে যাচ্ছে স্বপ্ন ভঙ্গের দিন। কিন্তু এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণিত হয় সেদিন। বাংলাদেশী বোলারদের হাতের জাদুর কাছে ঘায়েল হয় ভারতের দাপুটে ব্যাটসম্যানগুলো। আর এভাবেই এক দুর্দান্ত জয় ছিনিয়ে নেয় বাংলাদেশ মহিলা দল।

ম্যাচ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের মতামত ছিল দুটি দল উইনিং পজিশনে থাকতে পারে। তবে অতীত পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশের ম্যাচ জেতার সম্ভবনা অনেকটাই কম ছিল।

কিন্তু ২০-২৫% সম্ভবনা নিয়েই বাংলাদেশ এই ম্যাচ নিজেদের করে নিয়েছিল সেদিন।

অনেক বিশেষজ্ঞের করা প্রেডিকশন ভুল প্রমাণিত হয় এবং বাংলাদেশ এক ইতিহাস গড়ে নিজের নামে।

ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার প্রথম ওডিআই হাইলাইটস নিচে বিশ্লেষণ করা হলো।

ভারত বনাম বাংলাদেশ ওডিআই হাইলাইটস

রবিবার শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় সকাল ৯.৩০ মিনিটে মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ ও ভারতীয় মহিলা দল। সেদিন টস জিতে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নেয় ভারতীয় দল। এতে বাংলাদেশ টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে প্রথম ১৫ ওভার শেষে ২ উইকেট হারিয়ে সংগ্রহ করে ৪০ রান। ১৫ ওভারের খেলা শেষে বৃষ্টির হানা দেয়।

এতে DLS মেথডে খেলা কমিয়ে আনা হয় ৬ ওভার। অর্থাৎ ৫০ ওভারের খেলা ৪৪ ওভার পর্যন্ত কমিয়ে আনা হয়।

সেদিন, ওপেনিং জুটি থেকে ভালো কিছু পায়নি বাংলাদেশ। ১৮ বলে শূন্য রানে মাঠ ছাড়েন শারমিন আক্তার। দলের আরেক ওপেনার মুর্শিদা করেন ১৩ রান।

অধিনায়ক নিগার সুলতানা বাংলাদেশ দলের হয়ে সর্বোচ্চ রান করে ৩৯ রান।

দলের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান করেন ফারজানা হক। তিনি ৪৫ বলে ২৭ রানের একটি ইনিংস খেলেন।

অধিনায়ক নিগার সুলতানা এবং ফারজানার ৭৪ বল খেলে ৪৯ রানের ইনিংস বাংলাদেশ দলের রানের খাতা কিছুটা বৃদ্ধি করে।

কিন্তু ফারজানা সুলতানা এবং নিগার সুলতানার জুটি ভেঙে যাওয়ার পর বাংলাদেশ দলের কোনো ব্যাটসম্যান আর মাঠে বেশিক্ষণ থাকতে সক্ষম হননি।

সর্বোপরি, প্রত্যেকের নেওয়া অল্প রানের কল্যাণে ১ ওভার বাকি থাকতেই ১৫২ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ দল।

৪৪ ওভারে ১৫২ রানের ইনিংসটি সবাই ভেবেই নিয়েছিল ভারতের সাধ্যের অনেক কাছে হিসেবে। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশি বোলাররা রীতিমত ম্যাজিক দেখিয়েছে।

বাংলাদেশের দেওয়া ১৫৩ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ১১৩ রানেই অলআউট হয় ভারত।

বাংলাদেশের রানের পরিমাণ ছোট হলেও ভারতের ইনিংসকে শুরু থেকেই কিছুটা চাপের মধ্যে রাখে তারা।

দলের অন্যতম ব্যাটসম্যান ও অধিনায়ক হারমনপ্রীত করকে ৫ রানে সাজঘরে ফেরায় নাহিদা আক্তার।

প্রথম ৩০ রান শেষে দুই উইকেট নিয়ে ভারতকে চেপে ফেলে বাংলাদেশ।

এরপর ইয়াস্তিকা ভাটিয়াকে মাত্র ৭ রানেই মাঠের বাইরে পাঠান রাবেয়া খান।

কিন্তু ভারতের রানের খাতা বড় হতে থাকে ষষ্ঠ উইকেটে। আমনজোত কর এবং দীপ্তি শর্মার ৩০ রানের জুটি ভারত দলকে কিছু সস্থি দিয়েছিল।

কিন্তু বাংলাদেশের জাদুকর মারুফা তাদের জুটি বড় করতে দেননি।

একে একে দুই বল করে আমনজোত এবং স্নেহ রানাকে আউট করেন মারুফা। এতেই ভারতের ইনিংস অনেকটা নড়বড়ে হয়ে পড়েছিল।

দীপ্তি শর্মা ৪০ বলে ২০ রান করে আউট হন। দীপ্তি শর্মার উইকেটের পর বাংলাদেশ সময়ের অপেক্ষা করছিল।

এভাবেই একে একে সবকটি উইকেট পতন হয় ভারতের।

এবং সবশেষে ১১৩ রানে গিয়ে তাদের ইনিংস এর সমাপ্তি হয় এবং বাংলাদেশের জয়জয়কার শুরু হয়।

ভারতের বিপক্ষে ওডিআই ফরমেটে জেতার খাতা খুলতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ দল।

দলের হয়ে ৪ উইকেট এবং ব্যক্তিগত ৬ রান নিয়ে ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হয় মারুফা আক্তার।

তিনি ছিলেন সেদিন ম্যাচ জয়ের মূল তারকা।

বাংলাদেশ মহিলা দল বনাম ভারত ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট

বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যকার ম্যাচের প্রথম ইনিংস শেষে যখন বাংলাদেশ ভারতকে মাত্র ১৫৩ রানের টার্গেট দেয়, তখন অনেকটাই অনিশ্চিত ছিল বাংলাদেশের জয়।

কিন্তু ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট ছিল কয়েকটি। প্রথম টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে বলা যায় অধিনায়ক হারমনপ্রীত এর মূল্যবান উইকেট।

ভারত দলকে জেতানোর জন্য হারমনপ্রীত এর উইকেট ছিল সবচেয়ে বেশি মূল্যবান।

আর সেই কাজটাই করলেন নাহিদা আক্তার। অন্যদিকে রাবেয়া খানের উইকেটটিও ছিল বাংলাদেশের জেতার জন্য টার্নিং পয়েন্ট।

সর্বোপরি মারুফা আক্তার এর সম্পূর্ণ পারফরমেন্স এবং ৪ উইকেট তুলে নেওয়ার কল্যাণেই বাংলাদেশ প্রথমবারের মত ভারতের বিপক্ষে জয় পায়।

বাংলাদেশ ওডিআই দলের প্লেয়িং ইলেভেন

শামীমা সুলতানা, নিগার সুলতানা (উইকেটরক্ষক এবং ক্যাপ্টেন), মুর্শিদা খাতুন, ফারজানা হক, নাহিদা আক্তার, বর্ণা আক্তার, সুলতানা খাতুন, রিতু মনি, মারুফা আক্তার, রাবেয়া খান, ফাহিমা খাতুন।

ভারত ওডিআই দলের প্লেয়িং ইলেভেন

শেফালি ভার্মা, স্মৃতি মান্ধানা, জেমিমাহ রড্রিগস, হরমনপ্রীত কর (অধিনায়ক), ইয়াস্তিকা ভাটিয়া (উইকেটরক্ষক), দীপ্তি শর্মা, আমানজোত কর, পূজা ভাস্ত্রকার, মেঘনা সিং, দেবিকা বৈদ্য, স্নেহ রানা।

উপসংহার

বাংলাদেশের এমন দুর্দান্ত জয় নিয়ে আপনার মতামত কি সেটা আমাদের কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না।

একইসাথে জানিয়ে দিতে পারেন পরবর্তী ম্যাচগুলোতে কারা সিরিজ জেতার দিকে এগিয়ে যাবে। এমনি সব ক্রিকেট নিউজ পেতে আমাদের সাথেই থাকুন!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *