তামিম ইকবাল বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে ওডিআই রান সংগ্রহকারী

তামিম ইকবাল বাংলাদেশ জাতীয় দলের একজন অন্যতম ওপেনার, ব্যাটসম্যান এবং অধিনায়ক। দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশ ক্রিকেটে তার অবদান অনস্বীকার্য। ক্যারিয়ারের শুরু থেকে করেছেন ছোট বড় অসংখ্য রেকর্ড। এই তামিম ইকবালই হচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে ওডিআই রান সংগ্রহকারী।

আজকের পর্বে তামিম ইকবালের ইতিহাস এবং তার সকল রেকর্ড গুলো সম্পর্কে আপনাদের জানাবো। আপনিও যদি বাংলাদেশ ক্রিকেট এবং তামিমের ভক্ত হয়ে থাকেন তবে সাথেই থাকুন, বিস্তারিত জানুন।

তামিম ইকবাল খান হচ্ছেন বাংলাদেশের একজন নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান, নির্ভরযোগ্য ওপেনার এবং একইসাথে নির্ভরযোগ্য একজন অধিনায়ক। তিনি বাহাতি ব্যাটিং করে থাকেন যেটা আমরা সবাই জানি। ২০০৭ সালে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তার অভিষেক হয়েছিল। একই বছরে তিনি সুযোগ পায় টেস্ট দলে খেলার।

বাংলাদেশের অন্যতম একজন ওপেনার হিসেবে সব ফরমেটে শতকের দেখা পেয়েছেন তিনি। রয়েছে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। বিপিএল এ তিনি বর্তমানে ঢাকা প্লাটুন এর হয়ে প্রতিনিধিত্ব করে থাকেন। ক্রিকেট বিশ্বে তার রয়েছে অসংখ্য রেকর্ড। তিনিই ২০১১ সালে উইজেন ক্রিকেটার্স অ্যালামন্যাক এর বর্ষের সেরা ৪ ক্রিকেটারদের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন। আজকে আপনাদের সাথে তামিম ইকবালের করা বিভিন্ন রেকর্ড গুলো তুলে ধরতে চলেছি।

তামিম ইকবাল এর সকল রেকর্ডসমূহ

১. বাংলাদেশী প্লেয়ার হিসেবে সবচেয়ে কম বয়সে সেঞ্চুরি করার রেকর্ড রয়েছে তার। ২০০৮ মাত্র ১৯ বছর বয়সে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওডিআই ফরমেটে দুর্দান্ত এক শতক করেন এই তারকা। বাংলাদেশী প্লেয়ারদের মধ্যে কম বয়সে শতক এর দেখা পাওয়ার রেকর্ড নেই বললেই চলে।

২. আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলদেশে সকল ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তামিমের রানের সংখ্যা বেশি।

৩. ওডিআই ফরমেটে বাংলাদেশের একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে বেশি রানের রেকর্ড তার। ২৪১ টি ম্যাচে ৩৬.৬২ গড়ে তিনি করেছেন ৮৩১৩ রানের রেকর্ড। সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড রয়েছে ১৫৮। ওডিআই পর্যায়ে বাংলাদেশিদের মধ্যে একমাত্র তামিমের আছে কয়েকবার ১৫০+ রান সংগ্রহ করার রেকর্ড।

এছাড়াও এই বড় সংখ্যার রানের মাঝে দেখা রয়েছে ১৪ টি শতক এবং ৫৬ টির বেশি অর্ধ শতকের।

বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ৮০০০ রানের মাইলফলক ছুঁয়েছেন তামিম।

৪. ওপেনার হিসেবে সবচেয়ে বেশি রান করা ক্রিকেটারদের মধ্যে ৭ম পজিশনে রয়েছেন তামিম ইকবাল । তার উপরে রয়েছে সচিন টেন্ডুলকার এর মত বড় সব নাম।

৫. টেস্ট ফরমেটে ৭০ টি ম্যাচ খেলে করেছেন ৩৮.৮৯ গড়ে ৫১৩৪ রান।

সর্বোচ্চ রান করেছেন ২০৬। টেস্ট পর্যায়ে রয়েছে ১০ টি শতক এবং ৩১ টি অর্ধ শতকের রেকর্ড।

৬. টি-টোয়েন্টি ফরমেটে সর্বমোট ৭৮ টি ম্যাচ খেলে করেছেন ১৭৫৮ রান। বাংলাদেশের একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে টি-টোয়েন্টি ফরমেটে বিশ্বকাপের আসরে ওমানের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেন তামিম ইকবাল।

১০৩ রানে অপরাজিত থাকা সে ইনিংস সবার মনে এখনও গেঁথে আছে। এছাড়াও আরো রয়েছে ৭ বারের অর্ধশতক করার রেকর্ড।

৭. ওডিআই ফরমেটে লিটনের ২৯২ রানের ওপেনিং জুটির রেকর্ড গড়েন তামিম ইকবাল।

৮. ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ছক্কা হাকানো ব্যাটসম্যান হচ্ছে তামিম।

এছাড়াও একদিনের ইনিংস এ সর্বোচ্চ ৬ টি ছক্কা হাঁকান রেকর্ড করেন তিনি।

এসব রেকর্ডের বাইরেও দারুন অধিনায়কত্ব এবং মাঠের ভেতরের ভালো ফিল্ডিং করে বিভিন্ন সময় দলকে জিততে সাহায্য করেছিলেন তামিম ইকবাল।

তাইতো বাংলাদেশ ক্রিকেটের এই পর্যন্ত আসর পিছনে তামিমের অবদান যেন মনে রাখার মতই।

তামিমের খেলা সেরা ৫ ম্যাচ

তামিম ইকবালের খেলা অনেক ম্যাচ রয়েছে যেগুলোতে তিনি দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখেছিলেন। তবে এই পর্যায়ে তার খেলা সেরা ৫ টি ম্যাচ এর বিবরণ আপনার সামনে তুলে ধরছি।

তামিম ইকবাল এর ১৩৬ বলে ১৫৮ রান

২০২০ সালের মার্চ মাসে সিলেটে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওডিআই ম্যাচে এই দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেন তামিম ইকবাল।

সেদিন ২০ টি বাউন্ডারি এবং ৩ টি ছক্কা হাঁকানোর মাধ্যমে ১১৬.১৭ স্ট্রাইক রেটে ১৫৮ রানের একটি বড় ইনিংস খেলেছিলেন তিনি।

তামিম ইকবাল এর ১৩৮ বলে ১৫৪ রান

ওডিআই ফরমেটে এটি বাংলাদেশী প্লেয়ারদের মধ্যে তৃতীয় সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড ছিল। ২০০৯ রানে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তামিম ১৩৮ বলে ১৫৪ রানের এই ইনিংস খেলেন।

যেখানে অন্তর্ভুক্ত ছিল ৭ টি বাউন্ডারি ও ৬ টি ওভার বাউন্ডারি।

তামিমের ১৮৬ বলে ১৩২ রান

ওডিআই ক্রিকেটে ২০১৫ সালে মিরপুরে পাকিস্থানের বিপক্ষে এই দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন তামিম।

১৫ টি বাউন্ডারি এবং ৩ টি ছক্কার সাহায্যে ১৩২ রানের দারুণ ইনিংস উপহার দেন তিনি।

টেস্ট ফরমেটে সর্বোচ্চ ২০৬ রান

টেস্ট ক্রিকেটে তামিমের রয়েছে ডবল সেঞ্চুরি করার রেকর্ড। পাকিস্থানের বিপক্ষে খুলনায় প্রথম টেস্ট ম্যাচে খেলতে নেমে এই রেকর্ড গড়েন তামিম।

প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে টি২০ তে ১০৩*

প্রথম ব্যাটার হিসেবে তিনি বাংলাদেশের হয়ে ৬৩ বলে ১০৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছেন।

টি-টোয়েন্টি ফরমেটে এটি ছিল একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে তার সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড।

এই ছিল তামিম ইকবালের ক্যারিয়ারের সেরা ৫ ম্যাচের রানের রেকর্ড যেখানে তামিম দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেছিলেন।

তামিম ইকবাল এর ওডিআই ফরমেটে অবসর

সম্প্রতি তামিম ইকবালের ওডিআই বিশ্বকাপের আগে হটাৎ অবসর নেওয়ার ব্যাপারটি দুশ্চিন্তায় ফেলেছিল বাংলাদেশ দলকে।

আফগানিস্তানের কাছে নিজেদের প্রথম ওডিআই হারের পর তামিম ইকবাল একটি প্রেস কনফারেন্স এর ডাক দিয়েছিলেন।

পরদিন দুপুরে তিনি হটাৎ অবসরের ঘোষণা দেন।

অবসরের ঘোষণা দেওয়ার সময় তিনি অচিরেই কেঁদে বসেন।

ক্রিকেটের প্রতি তার কতটা ভালোবাসা এবং আবেগ সেটা তাকে দেখেই বোঝা যায়।

তামিমের অবসর ঘোষণার পর থেকেই বাংলাদেশে এটিকে নিয়ে শুরু হয় নানান বিতর্ক।

তবে অনেকেই ভেবে নিয়েছিল প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং তাকে ফিরতে নির্দেশ দিলে তিনি অবশ্যই ফিরবেন আবার।

ঠিক সেটাই হলো! অবসর ঘোষণার একদিন না যেতেই প্রধান মন্ত্রীর সাথে বৈঠকে বসেন তামিম, সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সামনে তামিম তার অবসর প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।

তিনি আরো বলেন প্রধানমন্ত্রী তাকে দেড় মাস ছুটি দিয়েছে সব সমস্যা রিকভারি করার জন্য। এরপর থেকে তিনি আবার নিয়মিত দলে ফিরবেন এবং তাকে মাঠে আবারও ব্যাট হাতে দেখা যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *