আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়া তামিম ইকবাল এর ইউটার্ন

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়া তামিম ইকবাল এর ইউটার্ন ক্রিকেটে অনেকটাই সারা জাগিয়ে তুলেছে। হটাৎ করে বাংলাদেশের ওডিআই দলের অধিনায়কের এমন কাণ্ড দেখে রীতিমত অবাক ক্রিকেট বিশ্ব। কিন্তু একদিন যেতে না যেতেই সেই অবসর প্রত্যাহার করলেন তামিম। আজকের পর্বে তামিমের অবসর ঘটনার অদ্যপ্রান্তে জানাবো আপনাদের।

তামিম ইকবাল কবে ও কেন অবসর নিয়েছিলেন?

হটাৎ আফগানিস্থান সিরিজের প্রথম ম্যাচের পরপরই তামিম ইকবাল ভারতে বিশ্বকাপ শুরুর মাত্র তিন মাস আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান এবং চন্দিকা হাথুরুসিংহা ১০০% ফিট না হওয়া সত্ত্বেও তামিমের খেলার ধারণার সাথে একমত না হওয়ার এক দিন পর এই ঘোষণা আসে।

চট্টগ্রামের হোটেল টাওয়ার ইনে দুপুর দেড়টায় আকস্মিক সংবাদ সম্মেলনে তামিম তার অবসরের ঘোষণা দেন। বুধবার মধ্যরাতে তামিম সাংবাদিকদের চিঠি দিয়ে সংবাদ সম্মেলনের কথা জানান। কিন্তু সবাই ভেবেছিল তিনি বোধয় তার অধিনায়কত্ব থেকে দূরে সরে যাবে। এটি প্রথমে দুপুর ১২টায় হওয়ার কথা ছিল কিন্তু পরে তা ১.৩০ টায় নির্ধারণ করা হয়েছিল।

আবেগে আপ্লুত হয়ে তামিম বলেন, “আফগানিস্তানের বিপক্ষে গতকালের ওডিআই ছিল আমার শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ। আমি অবিলম্বে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিচ্ছি। এটা কোনো আকস্মিক সিদ্ধান্ত নয়। আমি এটা নিয়ে অনেক চিন্তা করেছি এবং আমার পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করেছি।”

“ওডিআই ক্যারিয়ারের জন্য এখানেই আমার শেষ।

আমি আমার সেরাটা দিয়েছি। আমি আমার সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আমি এই মুহুর্ত থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিচ্ছি। আমি আমার সব সতীর্থ, কোচ, বিসিবি কর্মকর্তা, আমার পরিবারের সদস্যদের ধন্যবাদ জানাতে চাই যারা আমার দীর্ঘ যাত্রায় আমার সাথে ছিল”।

“তারা আমার প্রতি আস্থা রেখেছে। আমি ভক্তদেরও ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমার প্রতি আপনাদের ভালোবাসা এবং বিশ্বাস আমাকে বাংলাদেশের জন্য আমার সেরাটা দিতে অনুপ্রাণিত করেছে। আমি আমার জীবনের পরবর্তী অধ্যায়ের জন্য আপনাদের দোয়া চাই। অনুগ্রহ করে আমাকে আপনাদের দোয়ায় রাখুন”।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টের আগে তামিমের পিঠে সমস্যা দেখা দেয়, যার কারণে তাকে বিশ্রামে যেতে হয়। তিনি নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারেন কিনা তা দেখার জন্য প্রথম ওয়ানডেতে নিজেকে খেলার সাথে যুক্ত করেছিলেন।

তামিম সেদিন খুব তাড়াতাড়ি আউট হন এবং ডিএলএস পদ্ধতিতে ওডিআই সিরিজ হেরে যায় বাংলাদেশ। তার ব্যাটিং ফর্ম এবং অধিনায়কত্ব নিয়ে সমালোচনা করেছেন অনেকেই। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ম্যাচ মিস করায় তার ফিটনেস কিছু সময়ের জন্য একটি প্রধান সমস্যা ছিল।

ওয়ানডেতে তার অধীনে বাংলাদেশ ভালো করলেও তামিমের জন্য গত কয়েক মাস বিশৃঙ্খল ছিল।

বিসিবি সভাপতি নাজমুল ফেব্রুয়ারিতে তামিম ও তার দীর্ঘদিনের বন্ধু ও সতীর্থ সাকিবের মধ্যে ‘ফাটল’ নিয়ে মুখ খোলেন।

বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েকবার প্রশ্ন সামলাতে হয়েছে তামিমকে।

বিশ্বকাপে যাওয়ার পাশাপাশি তার ব্যাটিং ফর্ম একটি প্রধান উদ্বেগের বিষয় ছিল।

বুধবার দুপুরে এভাবেই নিজে এবং ভক্তদের কাদিয়ে ওডিআই ক্রিকেট থেকে বিদায়ের খবর শুনিয়েছিলেন তামিল ইকবাল। কিন্তু টুইস্ট ছিল ১ দিন পর।

অবসর গ্রহণের একদিনের মধ্যেই কিনা আবার সেই অবসর প্রত্যাহার করেন তিনি।

তামিম ইকবাল এর হঠাৎ অবসর থেকে ইউটার্ন কেন?

৩৪ বছর বয়সী তামিম তার অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্তে ইউ-টার্ন নিয়েছেন। ঢাকা ট্রিবিউনের মতে, বিসিবি নিশ্চিত করেছে যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপের পর তিনি তার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেছেন। একটি বৈঠকের জন্য আমন্ত্রণ জানানোর পরে তিনি শুক্রবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করেছিলেন তামিম, তার স্ত্রী, মাশরাফি এবং বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন।

তাদের মিটিং এর জন্য প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে ডাকা হয়েছিল।

তামিম অবসর নেবেন এই ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই সবার শেষ ভরসা ছিল প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং।

দেশের নেত্রী তিনি, তার কথা যে তামিম কোনোভাবেই ফেলতে পারবেন না একথা সবার কাছেই জানা।

সবাই অপেক্ষায় ছিল কবে প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবে। অবশেষে তাই হলো, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আবারও ফিরলেন তামিম।

তবে, ৩১ আগস্ট থেকে শুরু হতে যাওয়া এশিয়া কাপে ফেরার আগে দেড় মাসের বিরতিও নেবেন তিনি।

আফগানিস্তানের সাথে চলমান সিরিজে তাকে দেখা যাবে না।

দেড় মাসের ছুটি শেষে আবারও ফিরবেন তিনি ক্রিকেট মঞ্চে। এই সিদ্ধান্তে ক্রিকেট ভক্তরা যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে।

তামিম ইকবালের অবসর নেওয়াতে ক্রিকেট ভক্তদের মতামত

তামিম ইকবাল এর অবসর নেওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশের ভক্তরা অনেক আবেগী হয়ে পড়েছিল। কেউ মেনে নিতে পারছিল না তামিমের হটাৎ নেওয়া এই বড় সিদ্ধান্তটি।

কারণ বাংলাদেশের একমাত্র নির্ভরযোগ্য ওপেনার তিনি।

তাকে ছাড়া দেশের ওপেনিং জুটিতে কতটা সমস্যা হবে সেটা সবার জানান।

সবাই চেয়েছিলেন তামিম যেন অবসর প্রত্যাহার করে আবার ফিরেন। অবশেষে সেটাই হলো।

তামিম ফিরেছেন, ভক্তদের আশাও পূরণ করেছেন।

তামিম ইকবাল আগামী বিশ্বকাপে খেলবেন?

সেদিন প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠকে নিজের অবসর প্রত্যাহার করেন তামিম। কিন্তু তিনি আরো জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী তাকে দেড় মাসের ছুটি দিয়েছেন।

এই দেড় মাস তার নিজের জন্য এবং তার পরিবারের জন্য।

এই দেড় মাস পর আবারো তাকে দেখা যাবে মাঠে।

আর তাই ভক্তদের আশা দেওয়ায় যায় যে এবারের বিশ্বকাপে ওপেনিং হিসেবে আবারও দেখা যাবে তামিম ইকবালকে।

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জন্য তামিম ইকবালের গুরুত্ব

বাংলাদেশ ক্রিকেটে তামিমের অবদান ভোলার মত নয়। ওয়ানডে ফরমেটে, বাংলাদেশ তার অধিনায়কত্বে ৩৫টি ম্যাচের মধ্যে ২১টি ম্যাচ জিতেছে।

তামিম ১৪টি শতক এবং ৫৬ টি অর্ধশতকের সাহায্যে ২৩৯ ইনিংসে ৩৬.৬ গড়ে ৮৩১৩ রান করেন।

বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ওডিআই ব্যাটার হিসাবে পরিচিতি তিনি।

এছাড়াও ৭০টি টেস্টে, ১০টি শতরান এবং ৩১টি অর্ধশতকের সাহায্যে তার ৫১৩৪ রান রয়েছে।

তিনি ২০২১ সালে টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিয়েছিলেন।

সেই ফরম্যাটে, তামিমই একমাত্র বাংলাদেশী ব্যাটসম্যান যিনি সেঞ্চুরি করেছেন।

২০ ওভারের আন্তর্জাতিক ফরম্যাটে তিনি ১১৬.৯৬ স্ট্রাইক-রেটে ১৭৫৮ রান করেন।

পরিসংখ্যানগত দিক বা মাঠের ভেতরে সব দিক থেকেই বাংলাদেশ ভুলবে না তার সব অবদান। বাংলাদেশ ক্রিকেটের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *