আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম এর ২১ শতকের সবচেয়ে বড় জয়

টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম এর ২১ শতকের সবচেয়ে বড় জয় ছিল ঢাকার শেরে বাংলা ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে শনিবার আফগানিস্তানকে হারানোর মাধ্যমে। সেদিন একক আয়োজিত টেস্ট ক্রিকেটে আফগানিস্তানকে ৫৪৬ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেট দল। এটি ছিল বাংলাদেশের ২১ শতকের সবচেয়ে বড় এবং রেকর্ড-ব্রেকিং জয়। রানের ব্যবধানের দিক থেকেই হোক বা দীর্ঘতম ফরম্যাটে এটি ছিল বাংলাদেশের ইতিহাস গড়া একটি জয়। রানের হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে বাংলাদেশের জন্য এটি তৃতীয় বৃহত্তম জয়। তবে ব্যক্তিগত ফরমেটে সর্বোচ্চ স্কোর ছিল এটি, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হিসেবে ২০০৫ সালে সর্বশেষ ২২৬ রানে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জিতেছিল বাংলাদেশ।

আর তাইতো এই বিশাল জয়কে কেন্দ্র করে দেশে ও দেশের বাইরে এতো উন্মাদনা।

বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম ও আফগানিস্তান টেস্ট সিরিজ ২০২৩

আফগানিস্তান দল বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমকে প্রথমে ব্যাট করতে বললেও তারা প্রথম ইনিংসে ৩৮২ রানে অলআউট হয়ে যায়।

প্রথম ইনিংসে নিজেদের দলের হয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহ করেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ১৪৬ রানের একটি বড় ইনিংসের সাথে নিজের ক্যারিয়ারের একটি শতক তুলে নেন এই ক্রিকেটার। এরপর দলের হয়ে ৭৬ রানের একটি বড় ইনিংস উপহার দেয় মাহমুদুল হাসান জয়, মুশফিকুর রহিম দলের হয়ে ৪৭ রান করেন এবং মেহেদি হাসান মিরাজ করেন ৪৮ রান।

এভাবেই বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসের খেলার শেষ হয়।

প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান জবাবে মাত্র ১৪৬ রান তুলতে পারে। আফসার জাজাই ৩৬ রান ও নাসির জামাল এর ৩৫ রানের শুরুটা পেলেও আফগান দলের কেউই হাফ সেঞ্চুরি করতে পারেননি।

অন্যদিকে, ৪৭ রানে ৪ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সেরা বোলার ছিলেন এবাদত হোসেন।

দ্বিতীয় ইনিংসে, শান্ত তার টেস্ট ম্যাচের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি করেন।

১২৪ রানে আরো একটি দুর্দান্ত শতক সাথে দলকে উপহার দেন আরো একটি দুর্দান্ত পারফরম্যান্স।

অধিনায়ক মুমিনুল হকও এই ইনিংসে সেঞ্চুরি করেন। দলের হয়ে তার রান সংখ্যা ১২১।

জাকির হাসান করেন ৭১ রান এবং লিটন দাস ৬৬ রানের হাফ সেঞ্চুরি করলে বাংলাদেশ ৪২৫/৪ এ আফগানদের ইনিংস ঘোষণা করে।

ফাইনাল ইনিংসে জয়ের জন্য ৬৬২ রানের প্রয়োজন ছিল আফগানিস্তানের।

দ্বিতীয়বারের মতো আফগানিস্তানের ইনিংস অল্প রানে শেষ হয়। মাত্র ১১৫ রানেই গুটিয়ে যায় তাদের পুরো ইনিংস।

তবে এইবার, ফাইনাল ইনিংসে বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম এর জন্য রেকার-ইন-চিফ ছিল তাসকিন আহমেদ। ৩৭ রান দিয়ে তুলে নিয়েছিলেন ৪ টি উইকেট।

একাধারে শরিফুল ইসলামও ২৮ রান খরচ করে ৩টি উইকেট তুলে নেন।

এভাবেই শেষ হয় পুরো ম্যাচটি। ফলাফল, বাংলাদেশ জিতে গেল ৫৪৬ রানের বড় ব্যবধানে।

পুরো ম্যাচে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স এর জন্য শান্তকেই ‘প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ’ হিসেবে নির্বাচিত করা হয়।

দুই ইনিংসের দুটি শতক এর সাথে ম্যাচের সর্বমোট ২৭০ রান করেছেন শান্ত।

২০১৯ সালে আফগানিস্তানের সাথে বাংলাদেশের ২২৪ রানের লজ্জাজনক হারের পর এইবার ২০২৩ সালে এসে ৫৪৬ রানের বড় জয় তুলে নেওয়ার মাধ্যমে নিজেদের হারের প্রতিশোধ নেয় বাংলাদেশ টাইগাররা।

বাংলাদেশ বনাম আফগানিস্তান আপকামিং সিরিজ

টেষ্ট সিরিজ শেষে এইবার বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম এবং আফগানিস্তান আবারও মুখোমুখি হবে ৫ জুলাই থেকে শুরু হতে যাওয়া তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে।

ওয়ানডে সিরিজ শেষে ১৪ ই জুলাই এবং ১৬ই জুলাই দুটি টি-টোয়েন্টি অনুষ্ঠিত হবে আফগানিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে।

টেস্ট ক্রিকেটের রেকর্ড

বিশ্ব টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড রয়েছে ইংল্যান্ডের। ১৯২৮ সালে অস্ট্রেলিয়াকে ৬৭৫ রানের বড় ব্যবধানে হারানোর মাধ্যমে এই বিশ্ব রেকর্ড গড়ে ইংল্যান্ড।

অপরদিকে ১৯৩৪ সালে ইংল্যান্ডকেই ৫৬২ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে দ্বিতীয় বড় রানে হারানোর বিশ্বরেকর্ড গড়ে অস্ট্রেলিয়া।

এরপর দীর্ঘসময় পর আবারও তৃতীয় দল হিসেবে ৫৪৬ রানের জয় পায় বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাস

সালটা ছিল ২০০০, ১০ নভেম্বর তারিখে ভারতের বিপক্ষে খেলতে নেমেই প্রথমবারের মতো টেস্ট ক্রিকেট যাত্রা শুরু হয় বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম এর।

এরপর থেকে এখনও পর্যন্ত ১০০ টিরও বেশি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ।

তবে দুঃখজনক হলেও সত্যি যে বাংলাদেশ এখনও টেস্ট ক্রিকেটে তাদের জায়গাটা শক্তভাবে করে নিতে পারেনি।

বিগত পরিসংখ্যান ঘাটাঘাটি করলেই দেখা যায় বাংলাদেশ খুব কম সংখ্যক ম্যাচ জিততে পেরেছে টেস্ট ফরমেটে। এর মধ্যে কিছু ম্যাচ রয়েছে ড্র। কিন্তু বড় একটা সংখ্যা রয়েছে হারের।

অর্থাৎ বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম যত টেস্ট ম্যাচ খেলেছে তার বেশিটাতেই ব্যর্থ হয়েছে। বাংলাদেশের এই ব্যর্থতার পেছনে অবশ্য অনেকগুলো কারণ রয়েছে।

টেস্ট ক্রিকেটে ওপেনিং জুটির উপর পুরো ম্যাচের একটি বড় দায়িত্ব থাকে।

কিন্তু বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট দলের ওপেনিং জুটিতেই রয়েছে যত সমস্যা।

প্রায় সব ফরম্যাটেই ওপেনিং এর জায়গাটা তামিম ইকবাল বজায় রাখতে পারলেও, তামিম ছাড়া অন্য কোনো ক্রিকেটার ওপেনিং এ সফল নয়। কেউই এই জায়গাটা অর্জন করে নিতে পারেনি।

বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটের আরো একটি বড় সমস্যার জায়গা হচ্ছে পেস বোলিং।

বাংলাদেশ দলের পেস বোলাররা তাদের দিক থেকে খুব একটা সফল নয় বললেই চলে।

ফলে সব ফরমেটে বাংলাদেশ দল স্পিন নির্ভর হয়ে থাকে। যদিও সম্প্রতি তাসকিন, এবদতরা তাদের জায়গা থেকে ভালো করছে।

তবে দীর্ঘ সময়ের জন্য মানসম্মত পেস বোলারের অভাব বাংলাদেশ টেস্ট ফরমেটে পিছিয়ে থাকার একটি অন্যতম কারণ।

এছাড়াও বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটের একটি বড় সমস্যা হিসেবে বলা যায় ধারাবাহিকতার অভাব।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়। পরপর দুই থেকে তিনটি উইকেট চলে গেলেই বাকিদেরও ছন্দপতন ঘটে।

এছাড়াও ব্যাটিং পারফরমেন্স ভালো হলেও বোলিং খারাপ বা বোলিং ভালো হলে ব্যাটিং খারাপ হওয়ার মতো সমস্যাটা প্রায় বাংলাদেশের ক্ষেত্রে লক্ষণীয়।

টেস্ট এ বাংলাদেশ দলের জয়

বাংলাদেশ টেস্ট ফরমেটে বেশিরভাগ জয় এসেছে ঘরের মাঠে। প্রতিপক্ষ দলের সাথে বাইরের খেলায় খুব একটা ভালো রেকর্ড বাংলাদেশের নেই।

ওয়ানডে ফরমেটে টাইগারদের অন্যতম দল হিসেবে বিবেচনা করা হলেও টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ এখনও নিজেদের পর্যায় তৈরি করতে পারেনি।

এছাড়াও পাইপলাইনে মানসম্মত খেলোয়াড়দের সংকট বাংলাদেশ ক্রিকেটকে অনেকটাই ভোগাচ্ছে।

তবে অতি সম্প্রতি আফগানদের বিপক্ষের এই বড় জয় টেস্ট ফরমেটে বাংলাদেশকে এনে দিয়েছে এক বিশাল তৃপ্তি।

এই জয় যেন সাধারণ কোনো জয় নয়, এই জয় যেন বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম এর ইতিহাস গড়ার একটি জয় ছিল। ক্রিকেট ভক্তদের ২১ শতকের এই বড় জয় উপহার দিয়ে টাইগাররা যেন জানান দেয় যে বাংলাদেশও ঘুরে দাঁড়াচ্ছে টেস্ট ক্রিকেটে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *