

বাংলাদেশ দলের আসন্ন আইসিসি বিশ্বকাপ ২০২৩ এর প্রস্তুতি
আইসিসি বিশ্বকাপ ২০২৩ এর মৌসুমের খেলা শুরু হতে যাচ্ছে অক্টোবরের ৫ তারিখ থেকে। এবারের বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করছে শক্তিশালী ১০ দল। বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের উন্মাদনার শেষ নেই। বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের স্বপ্নের শেষ নেই। শত অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে মাত্র ২ মাসের ব্যবধানে শুরু হবে বিশ্বকাপ।
তবে বিশ্বকাপকে ঘিরে বাংলাদেশের প্রস্তুতি কি? সাকিব, মাশরাফির চোখ যেখানে ২০২৩ বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হওয়া, সেখানে বিশ্বকাপের মঞ্চে কতটা এগিয়ে রাখতে পেরেছে বাংলাদেশ নিজেকে সেটা নিয়েই থাকছে আজকের আর্টিকেল। সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স বিচারে বাংলাদেশ দল কতটা এগিয়ে আছে সেটাই আজকে জানার বিষয়।
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের বর্তমান অবস্থা
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অতি সম্প্রতি খেলার পারফরমেন্স অনেকটা ভালো বলা যায়। সম্প্রতি আফগানিস্থান সিরিজের ফলাফল দেখার মাধ্যমে এটাই বলা যেতে পারে। যদিও বাংলাদেশ বনাম আফগানিস্তান এর মধ্যকার ওডিআই সিরিজে বাংলাদেশ আশানুরূপ কিছু করতে পারেনি।
কিন্তু ২-১ ব্যবধানে সিরিজ হারের পর দুর্দান্ত কামব্যাক করেছে বাংলাদেশ দল। টি টোয়েন্টি সিরিজে আফগানিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করেছে বাংলাদেশ দল।
ফলে এশিয়া কাপ এবং আইসিসি বিশ্বকাপ ২০২৩ এর আগে অনেকটাই স্বস্তির মাঝে আছে বাংলাদেশ।
এবার বাংলাদেশের সবচেয়ে ফর্মে থাকা ক্রিকেটার সম্পর্কে বলতে গেলে তিনি হচ্ছেন সাকিব আল হাসান। সাকিব আল হাসান বরাবরের মতোই ব্যাটিং এবং বোলিং উভয়দিকে ভালো পারফরমেন্স করছে। অন্যদিকে ওডিআই দলের অধিনায়ক লিটন দাস অনেকটাই ভালো করেছেন টি টোয়েন্টি সিরিজে। তরুণ ক্রিকেটারদের মধ্যে আলো ছড়াচ্ছেন তৌহিদ হৃদয়। টি টোয়েন্টি সিরিজে দুর্দান্ত পারফর্মেন্স দিয়ে নিজের সামর্থ্য প্রমাণ করেছেন তিনি।
বোলিং পর্যায়ে শরিফুল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ বরাবরের মতোই দারুন ফর্মে আছেন।
তবে বাংলাদেশের দুর্বলতার বিষয়ে বলতে গেলে ওপেনিং জুটির কথা বলতেই হয়।
ওপেনিং জুটি থেকে বাংলাদেশ আশানুরূপ কোনো ফল পাচ্ছে না। যেটা ওডিআই বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশের জন্য একটি বড় আশঙ্কার কারণ।
অন্যদিকে, মিডল অর্ডারের ব্যর্থতা আরেকটি দুর্বলতার কারণ হতে পারে।
বাংলাদেশের অন্যতম ব্যাটসম্যান নাজমুল শান্ত আফগানিস্থান সিরিজে তার মূল পারফরমেন্স দেখাতে পারেননি।
অন্যদিকে মুস্তাফিজের পারফর্মেন্স দলের জন্য এভারেজ পর্যায়ে বলা যায়।
তবে তরুণ ক্রিকেটারদের দারুন ফর্মে থাকার বিষয়টি বাংলাদেশ দলকে আশার আলো দেখাবে।
আসন্ন বিশ্বকাপে তরুণদের হাত ধরেই হয়তো বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে তাদের স্বপ্নের পথে।
নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং স্কোয়াড কম্পোজিশন
আইসিসি বিশ্বকাপ ২০২৩ এর জন্য বাংলাদেশের স্কোয়াড এখনও অফিসিয়ালি ঘোষণা করা হয়। তবে এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে দেখা যাবে তামিম ইকবালকে, একইসাথে সহ অধিনায়ক হিসেবে দেখা যাবে সাকিব আল হাসানকে। ২০২৩ বিশ্বকাপ ভারতে হওয়ায় বাংলাদেশ দল আলাদা সুবিধা পেতে চলেছে। চলুন এই পর্যায়ে বাংলাদেশ দলের সম্ভাব্য একাদশ দেখে নেওয়া যাক। আশা করা যায় বাংলাদেশ দলের স্কোয়াড অনেকটাই এমন হতে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ দলের বিশ্বকাপ একাদশ
তামিম ইকবাল (অধিনায়ক), লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত, সাকিব আল হাসান, তৌহিদ হৃদয়, মুশফিকুর রহিম (উইকেটরক্ষক), মাহিদি হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমান, নাসুম আহমেদ, হাসান মাহমুদ।
আইসিসি বিশ্বকাপ ২০২৩ এ বাংলাদেশের সেরা ৫ খেলোয়াড়
তামিম ইকবাল
লিটন দাস
সাকিব আল হাসান
তাসকিন আহমেদ
মুস্তাফিজুর রহমান
আইসিসি বিশ্বকাপ ২০২৩ এ বাংলাদেশের ব্যাটসম্যান
তামিম ইকবাল
লিটন দাস
নাজমুল হোসেন শান্ত
মুশফিকুর রহিম
আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপ ২০২৩ এ বাংলাদেশের বোলার
তাসকিন আহমেদ
মুস্তাফিজুর রহমান
নাসুম আহমেদ
হাসান মাহমুদ
আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপ ২০২৩ এ বাংলাদেশের অলরাউন্ডার
সাকিব আল হাসান
তৌহিদ হৃদয়
মেহেদী হাসান মিরাজ
বাংলাদেশের কোচিং এবং সাপোর্ট স্টাফ
বছরের শুরুতেই বাংলাদেশ জাতীয় দলের প্রধান কোচ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন চন্ডিকা হাথুরুশিঘে। তিনি ছিলেন শ্রীলঙ্কা দলের প্রাক্তন ব্যাটসম্যান, এছাড়াও ২০১৪-২০১৭ পর্যন্ত কোচের দায়িত্ত্ব পালন করেন তিনি।
বাংলাদেশের বিশ্বকাপে তাকে দলের কোচ হিসেবে দেখা যাবে।
ইতিমধ্যেই হাথুরুশিঘে আসার পর থেকে বাংলাদেশ অনেক ম্যাচেই জয়ের দেখা পাচ্ছে।
তাই ধারণা করা যায় তার হাত ধরেই এবার বিশ্বকাপে ভালো কিছুই করবে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের আইসিসি বিশ্বকাপ ২০২৩ এর পরিকল্পনা
বাংলাদেশের বিশ্বকাপের মূল পরিকল্পনা বিশ্বকাপ জেতা। কিছু সময় আগের কথা, বিশ্বসেরা অল রাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে একটি প্রশ্ন করা হয় যে “বাংলাদেশ কবে বিশ্বকাপ জিতবে”? প্রশ্নের জবাবে সাকিব বলেছিলেন যে ২০২৩ সালে। কারণ এটিই হবে সাকিবের শেষ বিশ্বকাপ।
সাকিব আল হাসানের এই কথা শুনে ক্রিকেট প্রেমীদের আবেগী হওয়াটাই স্বাভাবিক ছিল। সবাই এক পলকের জন্য স্বপ্ন দেখেই নিয়েছিল যে বাংলাদেশকে এবার বিশ্বকাপ জেতাবেন সাকিব। অন্যদিকে, বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অধিনায়ক তামিম ইকবাল বলেন, ” প্রতিটি বিশ্বকাপে আমরা গিয়েছি ভালো খেলার জন্য, কিন্তু এবারের বিশ্বকাপে আমরা খেলবো জেতার জন্য”।
সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বলেন, “আমি সেমিফাইনাল বা ফাইনাল বুঝি না। বাংলাদেশের এইবার একটি টুর্নামেন্ট জেতার সময় এসে গিয়েছে।”
বাংলাদেশ ক্রিকেটের মধ্যমনিদের বিশ্বকাপ নিয়ে এত আশা এবং স্বপ্ন আপনাকে বুঝিয়ে দিতে সক্ষম যে বাংলাদেশ এবার বিশ্বকাপ জেতার দাবিদার কিনা।
আর তাই বাংলাদেশের মূল পরিকল্পনা একটাই, সেটা হচ্ছে বিশ্বকাপে খেলা এবং টুর্নামেন্ট জেতা।
তবে তরুণ খেলোয়াড়দের নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনা থাকবে কোচের এবং টিম ম্যানেজমেন্টের।
ব্যাটিং পর্যায়ে মূল পরিকল্পনা জুড়ে থাকবে শান্ত, মুশফিক, তৌহিদ হৃদয়।
কেননা বাংলাদেশ ওপেনিং জুটির পর ম্যাচ টিকিয়ে রাখতে তাদের ফর্মে থাকা অত্যন্ত জরুরি।
২০২৩ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ পেতে যাচ্ছে তামিম, সাকিব এবং মুশফিকের মত অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের, যাদের আছে ৪টি বিশ্বকাপ এবং অসংখ্য টুর্নামেন্ট খেলার দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা।
বাংলাদেশ দলের মূল পরিকল্পনা থাকবে তাদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানো।
সর্বোপরি অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের অভিজ্ঞতা এবং তরুণদের ফর্ম বাংলাদেশকে এনে দিতে পারে সাফল্য।
বিগত বিশ্বকাপ থেকে শেখার বিষয়গুলো
বাংলাদেশ সর্বপ্রথম ১৯৯৯ সালে প্রথম বিশ্বকাপে অংশ নেয়। যদিও বাংলাদেশের ঝুলিতে এখনও পর্যন্ত কোনো বিশ্বকাপ নেয় তবে, বাংলাদেশ তাদের বিগত ম্যাচগুলো থেকে অনেক কিছুই শিখতে পারে ২০২৩ বিশ্বকাপের জন্য।
বাংলাদেশের সিনিয়র প্লেয়ার সাকিব, মুশফিক এবং তামিমের আছে ৪টি বিশ্বকাপ এবং বিভিন্ন চ্যাম্পিয়নশিপ টুর্নামেন্ট খেলার অভিজ্ঞতা।
যদিও তারা ইতিপূর্বে কোনো শিরোপা নিজের করে নিতে পারেনি।
তবে বিগত আসরের খেলা ম্যাচগুলোর ভুলগুলোকে শুধরে বাংলাদেশ দল ভালো কিছু করতে পারে আসন্ন বিশ্বকাপে।
বাংলাদেশের ওডিআই স্কোয়াডে বিশ্বকাপ খেলা প্লেয়ারদের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশ দলকে এগিয়ে রাখবে অন্যান্য দলের তুলনায়।